অষ্টগ্রামের নদীগুলো খনন করা হোক
গোলাম রসূল | ১:০০ অপরাহ্ন, ১৩ জুন, ২০২০
গোলাম রসূল
গোলাম রসূল: নদীমাতৃক এ দেশের নামের স্বার্থকতা যেসব এলাকার জন্য সেসব ভূঅঞ্চলের মধ্যে অষ্টগ্রাম অন্যতম। অষ্টগ্রামের চারপাশে রয়েছে অসংখ্য নদী ও হাওর। সেসব নদী ও হাওরের অপার সৌন্দর্যের জন্য অষ্টগ্রাম পরিচিতি পেয়েছে ভাটির রানি হিসেবে। মানে সৌন্দর্য বিবেচনায় রাজরানী যেমন সকলের সেরা থাকেন তেমনি প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্যের কারণে ভাটির রানি উপনামটি এখন অষ্টগ্রামের গর্ব। কিন্তু এ গর্বের সূতিকাগার হিসেবে পরিগণিত অষ্টগ্রামের নদীসমূহ আজ মৃতপ্রায়। প্রাকৃতিক ও কৃত্তিম দুই কারণেই অষ্টগ্রামের নদীগুলো মরে যাচ্ছে। ফলে ভাটির রানির সৌন্দর্য দিন দিন লোপ পেতে চলেছে। প্রাকৃতিক জীব-বৈচিত্র ও মানুষের জীবন-জীবিকার উপরও এর দুষ্ট প্রভাব পড়ছে। নদীগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে অষ্টগ্রামের কৃষি ও কৃষকগণ। কারণ এ অঞ্চলের কৃষি সেচের প্রধান উৎস নদীর পানি। একটা সময় ডিপ টিউবওয়েলের মাধ্যমে সেচের ব্যবস্থা করা হত সামান্য কলেবরে। এখন অনেক গ্রামে সেটিও নেই। তাই নদীর পানিই সেচের একমাত্র উৎস। কিন্তু এখন নদীগুলো ভরাট হওয়ার দরুন পানির পরিমাণ কমে গেছে। জোয়ারের সময় কয়েক ঘন্টা পানি পাওয়া গেলেও ভাটার সময় একেবারেই পানি পাওয়া যায়না। অথচ, স্কুল জীবনে যখন কৃষি কাজের সাথে জড়িত ছিলাম তখন আমি নিজেই ডোড্ডার বিল (ছোট নদী) থেকে ভাটার সময়ও আমাদের জমিতে পানি এনেছি। এখন আর সে সুযোগ নেই। জোয়ার না আসা পর্যন্ত কৃষকদের অপেক্ষা করতে হয়। ফলে অনেক কৃষকই সময়মত জমিতে পানি সেচ দিতে পারেন না। বর্তমান অবস্থা চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে সেচের পানির তীব্র সংকট হবে সেকথা সহজেই অনুমেয়। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সেতু আমাদের গোটা অষ্টগ্রামের জন্য আশির্বাদস্বরুপ। এ সেতুর ফলে পাঁচটি ইউনিয়নের মধ্যে যোগাযোগের আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। এ সেতুর দাবি আমরা দেওঘর ও বাঙ্গালপাড়া ইউনিয়নবাসী দীর্ঘদিন ধরেই করে আসছিলাম। সেতুটি নির্মাণ করাই এলাকার অভিভাবক মাননীয় সাংসদ রেজোয়ান আহাম্মদ তৌফিকের নিকট এই দুই ইউনিয়নবাসী সবচেয়ে বেশি কৃতজ্ঞ। বর্তমানে এ সেতুর দুই পাশে প্রচুর পলি পড়েছে। বিশেষ করে সেতুর পূর্বপাশে বাঙ্গালপাড়া অংশে সবচেয়ে বেশি ভরাট হয়েছে। এ অংশটি দিয়ে এক সময় অষ্টগ্রাম-বাঙ্গালপাড়া যাত্রীবাহী গয়না (ট্রলার) চলত। কুড়েরপাড়ের খাল দিয়ে সে গয়না আনোয়ারপুর ও রথানী গ্রাম হয়ে বাঙ্গালপাড়া লঞ্চঘাট হতে আসা-যাওয়া করত। আমরা বাড়ি থেকে সে গয়না দেখে মুগ্ধ হতাম। মাঝে মাঝে অষ্টগ্রামের গুদারা পাড় হয়ে সে গয়না দিয়ে নানার বাড়ি বাঙ্গালপাড়া যেতাম। সেসব এখন শুধুই স্মৃতি। এখন আর বর্ষাকালে গয়না চলেনা। শুকনো মৌসুমেত প্রশ্নই আসেনা। কারণ একটাই নদী ভরাট। স্থলপথে সাব-মার্সিবল সড়ক ও নদীপথে স্পিডবোট অষ্টগ্রামের মানুষের যোগাযোগে পরিবর্তন আনলেও ঢাকার সাথে যোগাযোগের জন্য আমরা এখনো লঞ্চ ও ট্রলারের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু কাস্তুলের নিকট নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় বর্ষাকালে চললেও শুকনো মৌসুমে লঞ্চ চলে না। নদীর নাব্যতা একেবারেই নেই বললেও চলে। ফলে অষ্টগ্রামের মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। সম্প্রতি মাননীয় এমপি মহোদয় ইটনায় গৌর বাঁকা নদীর পুন:খনন কাজের উদ্বোধন করেছেন। অষ্টগ্রামের নদীসমূহকে নিয়ে নিশ্চয়ই উনার পরিকল্পনা রয়েছে। হয়তোবা এ বিষয়ে কোন প্রকল্পও হাতে নেয়া হয়েছে। যদি সেরকম না থাকে তবে এখনই এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য মাননীয় এমপি মহোদয়ের নিকট আবেদন জানাচ্ছি। অষ্টগ্রামের যেকয়টি নদী রয়েছে এ এলাকার গণমানুষের ও প্রকৃতির বৃহত্তর স্বার্থে সেগুলোর দ্রুত খনন করে আপনি আরো একটি উন্নয়নের মাইলফলক সৃষ্টি করবেন এই প্রত্যাশা। লেখক: সাংবাদিক ও হাওর উন্নয়নকর্মী।
1 Comments
Warning: Undefined array key "datetime" in /home/vatirrani/public_html/comments.php on line 23