রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
 
vatirrani News

প্রচ্ছদ ইটনা সাইকুল বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ ইটনার পাঁচকাহনীয়াবাসী

সাইকুল বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ ইটনার পাঁচকাহনীয়াবাসী

নিউজ ডেস্ক | ৮:০৪ পূর্বাহ্ন, ৩০ মে, ২০২১

1622340246.jpg
ছবিতে তিন আসামি বাঁ থেকে বরজু মিয়া, মাঝখানে প্রধান আসামি সাইকুল ইসলাম এবং ডানে সাইকুলের বড় ভাই শবিকুল

নিউজ ডেস্ক: কিশোরগঞ্জের প্রত্যন্ত হাওর উপজেলা ইটনায় ফুটবল খেলা নিয়ে বিরোধকে উপলক্ষ্য করে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে দুর্জয় হাসান (২০) নামে এক কিশোরকে হত্যার চেষ্টা করেছে প্রতিপক্ষের ‘সাইকুল বাহিনী’র সন্ত্রাসীরা। তার মাথার ডান পাশে ও বাম হাতের কনুইয়ে গুরুতর জখম হয়েছে। গত ২১ মে ইটনার বড়িবাড়ি ইউনিয়নের পাঁচকাহনীয়া গ্রামের দক্ষিণ পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।

ওই ঘটনায় গুরুতর আহত দুর্জয় কিশোরগঞ্জ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এখন চিকিৎসাধীন। এ ছাড়া তাকে রক্ষায় এগিয়ে গিয়ে আহত রেজু মিয়াও (২১) হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ ঘটনায় সাইকুলসহ ১৭ জনকে আসামি করে ইটনা মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে ঘটনার এক সপ্তাহ পার হয়ে হলেও পুলিশ কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। অন্যদিকে, সাইকুলদের পক্ষ থেকেও থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

পাঁচকাহনীয়া গ্রামের মৃত আব্দুস সালামের ছেলে আলোচিত বাহিনীর প্রধান বলে পরিচিত সাইকুল ইসলাম। এলাকায় বিস্তর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সাইকুলের নেতৃত্বে ওই বাহিনীর সন্ত্রাসীরা দীর্ঘদিন ধরে নানা অপকর্মে সক্রিয়। তারা যখন যাকে খুশি প্রহার, হামলা, নির্যাতন, জোর-জবরদস্তি করে সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি দখল, সরকারি কাজে বাঁধাদানসহ নানারকম অপরাধ করে বেড়াচ্ছে। গেলো বোরো মৌসুমে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণেও বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় এ বাহিনী।

সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাইকুল বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে রয়েছে শবিকুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম, ফরজুল মিয়া, বরজু মিয়া, নজরুল ইসলাম, মিলন মিয়া, মিকাইল মিয়া, রফিকুল মিয়া প্রমুখ।

জানা যায়, ২১ মে দুর্জয়, রেজুসহ একদল কিশোর ও যুবক বোরো ফসল কাটার পর পরিত্যক্ত একটি জমিতে ফুটবল খেলছিলো। ওই সময় পারিবারিক বিরোধের জের ধরে সাইকুলের নির্দেশে সন্ত্রাসীরা দেশি অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। দুর্জয় হত্যাচেষ্টা মামলার এজাহারে বলা হয়, সন্ত্রাসীরা দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে দুর্জয়ের ওপর হামলা চালায়। দুর্বৃত্তরা রাম দা দিয়ে দুর্জয়ের বাম হাতের কনুইয়ে ও মাথায় আঘাত করে মারাত্মক জখম করে। দুর্জয়কে বাঁচাতে এগিয়ে গিয়ে রেজু মিয়াও আহত হয়। ঘটনার সময় দুর্জয়ের চিৎকার শুনে লোকজন এসে তাকে উদ্ধার করার পর আশঙ্কাজনক অবস্থায় কিশোরগঞ্জ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়।

এলাকাবাসী জানান, এ বাহিনীর সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় মারামারি, হানাহানিতে লিপ্ত। অন্যের জমি দখল করাই তাদের মূল কাজ। তাদের মূল হাতিয়ার পেশীশক্তি। এই বাহিনীর সদস্যরা এতোটাই হিংস্র প্রকৃতির যে, তাদের সামনে অসহায় এলাকাবাসী মুখ খোলার সাহস পায় না। কেউ প্রতিবাদ করলেই তার ওপর নেমে আসে নিষ্ঠুর নির্যাতন।

অভিযোগ রয়েছে, পাঁচকাহনীয়া বাজারের অবস্থিত ওই গ্রামের রায়হান আহমেদ পল্টুর দোকানঘর ও তার ভাইদের বসতবাড়ি বেশ কয়েক বছর ধরে দখল করে রেখেছে সাইকুল ইসলাম ও তার বাহিনীর লোকজন। অথচ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারটি প্রাণের ভয়ে মুখ খুলতে পারছে না। আবার দখল করা দোকানের পাশের সরকারি জায়গাও দখলে নিয়েছে সাইকুল বাহিনী। সেই জায়গায় দেওয়াল তুলে সাইকুল দখল করা দোকানের পরিধি বাড়িয়েছে।

রায়হানের ভাই ফরিদ মিয়ার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি শুধু বলেন, ‘আমার ভাই রায়হানের দোকান ও আমাদের বসতবাড়ি দীর্ঘদিন ধরে জোরপূর্বক দখল করে রেখেছে সাইকুল ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী’। তিনি দোকান ও বাড়ি উদ্ধারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চান।

জানা গেছে, গত বোরো ফসল কাটার মৌসুমে ১৭ ডিসেম্বর (২০২০) স্থানীয় জাঙ্গলের হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করেন কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের এমপি রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক। এরপর অগণিত কৃষক তাদের জমিতে বাঁধটি নির্মাণের অনুমতি দিলেও সাইকুল তার জমির ওপর বাঁধ নির্মাণে বাধা দেন।

পাউবো সূত্র জানায়, পুরো বাঁধ সম্পন্ন করা গেলেও সাইকুলের জমির অংশটি ফাঁকা রাখতে হয়। স্থানীয়রা জানায়, সাইকুল ওই জমিতে ধান চাষ করেন। এবার অকাল (আগাম) বন্যা হলে সাইকুলের কারণে পুরো হাওরের ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হতো।

নাম প্রকাশ না করে স্থানীয় এক কৃষক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সাইকুল যে সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলেছে, তার পেছনে শেল্টার দিচ্ছেন স্থানীয় এক প্রভাবশালী নেতা। আর সাইকুল ও তার বাহিনীর অধিকাংশ সন্ত্রাসী আগে বিএনপির রাজনীতি করতো। ক্ষমতার পালাবদলের পর এখন আওয়ামী লীগ সেজে ওই নেতার আশ্রয়ে অবাধে সন্ত্রাস করে বেড়াচ্ছে। এটা সারা ইউনিয়নের মানুষই জানে’।

বড়িবাড়ি ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ফালন মিয়া বলেন, ‘সাইকুল গংদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। প্রতিদিনই কারো না কারো সাথে ঝগড়া বাঁধাচ্ছে তারা। সরকারি উন্নয়নমূলক কাজেও বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে এই বাহিনী’।

একই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জুলহাস মিয়া বলেন, ‘সরকারি রাস্তা দখল করে দেওয়াল নির্মাণ করেছে সাইকুল ও তার অনুসারীরা। চলতি বছর হাওর রক্ষা বাঁধ তৈরির জন্য সরকারি নির্দেশে সবাই জমি দিলেও জমি দেননি সাইকুল। সাইকুলের জমির দুই পাশে বাঁধের কাজ চালু হলেও সাইকুলের হুমকিতে থমকে গেছে পুরো বাঁধের কাজ’।

বাহিনী প্রধান সাইকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ওঠা এলাকাবাসীর অভিযোগ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানতে তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে একাধিকবার কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

ইটনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোর্শেদ জামান এ প্রসঙ্গে কালের কণ্ঠকে বলেন, সাইকুলদের বিরুদ্ধে নানারকম অভিযোগ তার কানে আসছে। তবে ওইসব ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত কেউ সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দায়ের করেনি।

তিনি জানান, গত শুক্রবার দুপক্ষের মধ্যে মারামারি হয়। এতে উভয়পক্ষের লোকজনই কমবেশি আহত হয়েছে। দুপক্ষই প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেছে। এখন পর্যন্ত কোনো আসামি গ্রেপ্তার করা যায়নি। তবে অভিযান চলছে।

সূত্র: কালের কন্ঠ

Post Your Comment

সম্পাদক: গোলাম রসূল, উপদেষ্টা সম্পাদক: কুদ্দুস আফ্রাদ ও ইব্রাহিম খলিল খোকন, নির্বাহী সম্পাদক: এস. এম. ফরহাদ
বার্তাকক্ষ: 01911214995, E-mail: info@vatirrani.com
Developed by CHAHIDA.COM