শহীদ সাবিকুল অমর, ভাতশালার সেতুটি তার নামে নামকরণ করা হোক
গোলাম রসূল | ৭:৫৬ অপরাহ্ন, ১২ জুলাই, ২০২৩
গোলাম রসূল: কবি লিখেছেন- “এমন একটি মনোরম স্থানে মৃত্যু হোক, যেখানে আজরাঈলের কানে বাজবে মধুর সমুদ্র গর্জন।” অষ্টগ্রাম উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের বরাগীরকান্দি গ্রামের আবদুর রহিমের নওজোয়ান ছেলে সাবিকুল সম্ভবত কবিতাটি পড়েছিলেন। তাইতো তার দৈহিক মৃত্যু হয়েছে এমন একটি স্থানে যেখানে বর্ষাকালে সমুদ্রের গর্জনের মতই মধুর আওয়াজ শোনা যায়। যে আওয়াজ শোনার জন্য প্রতিবছর হাজারো পর্যটক অষ্টগ্রাম হাওরে বেড়াতে আসে। ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, “সেই মানুষ যে তার অন্তরের মৃত্যুকে ভয় করে, শরীরের মৃত্যুকে নয়। আর সাইয়দে কুতুব (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, “আমার কাছে এটা কোন বিষয় নয় যে, আমি কোথায় মরতে যাচ্ছি। আমিতো এতেই সন্তুষ্ট যে, আমি আল্লাহর একজন অনুগত বান্দা হিসাবে শাহাদতের পেয়ালা পান করতে যাচ্ছি।” শহীদ সাবিকুল শরীরের মৃত্যুকে জয় করেছেন। হয়েছেন প্রকৃত মানুষ। অষ্টগ্রামের সাহসী বীর। শাহাদতের পেয়ালা পান করেছেন আল্লাহর একজন অনুগত বান্দা হিসাবে। সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই। শহীদ সাবিকুল এই মর্মবাণীটি হয়ত জানতেন। তাইতো নৌকা ডুবিতে কোন ধর্মের মানুষ ছিল, কোন এলাকার মানুষ ছিল সাবিকুল সেটা বিচার করেননি। অচেনা মানুষকে বাচাঁতে তিনি পানিতে ঝাঁপ দিয়েছেন। বাচিঁয়েছেন দুটি প্রাণ। শেষে তৃতীয়জনকে বাচাঁতে গিয়ে শক্তিহীন হয়ে হাওরের পানিতে শহীদ হয়েছেন। ‘যখন আমার মৃত্যু হবে’ কবিতায় আল্লামা রুমি লিখেছেন, আমার কফিন যখন নিয়ে যাবে তুমি তখন এটা ভেবো নাহ আমি এ পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাচ্ছি! চোখ থেকে অশ্রু ফেলো না মুষড়ে যেও না গভীর অবসাদে কিংবা দুঃখে আমি পড়ে যাচ্ছি না কোন অন্তর্হীন গভীর ভয়ংকর কুয়ায়! সাবিকুলের সাহসী, বীরোচিত ও শহীদী মুত্যুর পর অষ্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ বুকভরা কান্না, হাহাকার ও বিলাপ করেছে। ফেসবুকের পাতায় শুধু তাঁর জন্য শোক। কোন মানুষের মৃত্যুতে এত শোক আমি এর আগে দেখিনি। শহীদ সাবিকুল এক মহাকাব্যের নাম। তিনি কোনদিন এ পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাবেন না। এটাইতো জীবনের সার্থকতা। একই সঙ্গে মুত্যুরও। মানবজনমের সার্থকতা খুঁজতে খুঁজতে কত কবি সাহিত্যিক চলে গেছেন। জন্ম হোক যথা তথা, কর্ম হোক ভালো। এর সবই তো মানুষ হিসেবে জন্ম নেওয়ার কারণ খুঁজতে গিয়ে আবিষ্কার। এইযে আমরা বেঁচে আছি এরইবা কারণ কী হতে পারে? কেবল বেঁচে থাকার জন্যই যদি বেঁচে থাকা হয় তাহলে আর মানুষ অন্য জীবের মধ্যে পার্থক্য কোথায়? সাবিকুল কেবলমাত্র বেঁচে থাকার জন্যই বেঁচে থাকেননি। শাহাদাৎ বরণের মাধ্যমে তিনি প্রমাণ করেছেন সত্যিকারের মানুষ কেবল নিজেকে নিয়ে ভাবে না। অন্যের জন্যও নিজের জীবন উৎসর্গ করে। বাংলার অবিসংবাদিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব চিত্তরঞ্জনের মৃত্যুতে বিচলিত হয়েছিলেন রবীন্দ্র্রনাথ ঠাকুর। চিত্তরঞ্জনের মৃত্যুর পর রবি ঠাকুর লিখেছিলেন, “এনেছিলে সাথে করে মৃত্যুহীন প্রাণ, মরণে তাহাই তুমি করে গেলে দান।” আমাদের সাবিকুলের মৃত্যুতে অষ্টগ্রামের সর্বস্থরের মানুষ একই শোকগাথাঁ গাথঁছে। শহীদ সাবিকুল অমর। তিনি মানুষের মনে আজীবন বেচেঁ থাকবেন। যতদিন এই পৃথিবী থাকবে, তাঁর বীরত্বগাথাঁ মানুষ জানবে। আর সেজন্য ভাতশালার সেতুটি তার নামে নামকরণ করা হোক। সেখানে ছবি সম্বলিত একটি ফলকে তাঁর সাহসিক কাহিনি লিপিবদ্ধ করা হোক। ইতিমধ্যে এ বিষয়ে গণদাবি ওঠেছে। সরকারীভাবে সাবিকুলকে শহীদ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার দাবি জানাই। পাশাপাশি তার পরিবারের ভরণ-পোষণের জন্য সরকারি-বেসরকারি ভাবে কিছু করা যায় কিনা সেটাও বিবেচনার জন্য আহবান জানাই। লেখক: সাংবাদিক ও হাওর উন্নয়নকর্মী।